আসুন গু’নাহের কাজ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহমুখী হই

আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মানুষ তার এবাদত করবে এবং নবী-রাসূলদের নির্দেশিত পথে চলবে। নবী-রাসূলরা যা করতে বলেন, তা করবে। আর যা থেকে নিষেধ করেন, তা থেকে বেঁ’চে থাকবে; তাহলে সে ইহকালে সুখ ও শান্তির জীবন লাভ করবে এবং পরকালেও পাবে অকল্পনীয় নিয়ামতে ভরপুর জান্নাত।

কিন্তু, মানুষ আজ আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) নির্দেশিত পথ ছেড়ে দিয়ে নিজের ইচ্ছেমত জীবন যাপন করছে। পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। খু’ন করছে,গু’ম করছে, চু’রি করছে, ডা’কাতি করছে, ছিনতাই করছে, ব্যভিচারে লিপ্ত হচ্ছে, সুদ খাচ্ছে, ঘুষ খাচ্ছে। হেন কোন পা’পকাজ নেই, যা মানুষ করছে না।

প্রতিনিয়তই আম’রা আল্লাহ তায়ালার চরম অবাধ্যতায় লি’প্ত হচ্ছি। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন বিপদ দিয়ে আমাদের সতর্ক করেন। কারণ, মানুষ যে বিপদের সম্মুখীন হয়,সেটা তার হাতের কামাই।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপ’র্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাদের কর্মের শা’স্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা রূম : ৪১)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রূহুল মাআনীতে বলা হয়েছে, ‘বিপর্যয়’ বলে দু’র্ভি’ক্ষ, ম’হামা’রি, অ’গ্নিকা’ণ্ড, পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া, সব কিছু থেকে বরকত উঠে যাওয়া, উপকারী বস্তুর উপকার কম হওয়া এবং ক্ষ’তিক’র বিষয় বেশি বেশি হওয়া ইত্যাদি বিপদাপদ বুঝানো হয়েছে। (আল্লামা আলুসী, রূহুল মাআনী, খ.-২১, পৃ.-৬৩)

আর বর্তমানে ঘটছেও তাই। সুতরাং আয়াত থেকে বোঝা যায়, এসব পার্থিব বি’পদাপদের কারণ হচ্ছে মানুষের গো’নাহ ও অ’পক’র্ম। তার মধ্যে শির’ক ও কুফ’র হচ্ছে সবচে মা’রাত্ম’ক। তারপর রয়েছে অন্যান্য গু’নাহ।

আমাদের গুনাহের সংখ্যা কিন্তু এক দুটো নয়। অসংখ্য-অগণিত। চোখ খুললেই যে নারীকে দেখা জায়েজ নেই, তাকে আম’রা দেখি। হাঁটতে-চলতে গুনাহ করি। কথা বললে গুনাহ করি ; অন্যজনকে ক’ষ্ট দিই, পরনিন্দা করি। একে একে সবগুলো গুনাহের জন্য কি আল্লাহ তায়ালা আমাদের পাকড়াও করেন? শা’স্তি দেন? না, দেন না। বরং অধিকাংশই ক্ষমা করে দেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, যেসব বিপদাপদ তোমাদের স্প’র্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃ’তকর্মের কারণে। আর অনেক গুনাহ তিনি (আল্লাহ) ক্ষমা করে দেন। (সুরা শুরা : ৩০)

উপরের আয়াত থেকে বোঝা গেল, গোনাহের পরিমাণ অনুযায়ী আম’রা শা’স্তি ভোগ করি না। স্বল্পসংখ্যকের জন্যই ভোগ করি। গোনাহ যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখনই কেবল আল্লাহ তায়ালা মানুষদের বিভিন্ন মহামা’রি দিয়ে পরীক্ষা করেন। মানুষকে গোনাহের পথ থেকে ফিরে আসার সুযোগ দেন। বিপদের সম্মুখীন হয়ে বান্দা কী’ করে, এটা তিনি দেখতে চান। দেখেন।

তিনি বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব (কখনও) ভয়-ভীতি দিয়ে, (কখনও) ক্ষুধা দিয়ে এবং (কখনও) জানমাল ও ফলফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দিয়ে আর তুমি (হে নবি) ধৈর্যশীলদের সু-সং’বাদ দাও। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫)

আজ বিশ্বব্যাপী যে করোনাভাইরা’স ছ’ড়িয়ে পড়েছে, পূর্বের যুগেও তেমন ভাইরা’স-ম’হামা’রি বা বিপর্য’য় প্রকাশ পেত। তখন সেই যুগের নবী-রাসূলরা স্বীয় জাতিকে দিকনির্দেশনা দিতেন। সবার করণীয় কী’ হবে, তা বলে দিতেন। সুতরাং বর্তমান সময়ের এই ম’রণব্যা’ধি করোনাভাইরা’সের সমাধানের জন্যও আমাদের আল্লাহ ও তার রাসূলের বাণীর শরণাপন্ন হতে হবে।

হ’জরত নুহের (আ.) গোত্র যখন আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য হল। দেব-দেবীর পূজা করা আরম্ভ করল । তখন আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের প্রতি মহাপ্লাবন নাজিল করেন এবং সেই প্লাবনে নিমজ্জিত করে তাদের ধ্বংস করে দেন। কিন্তু নুহের (আ.) অল্পসংখ্যক অনুসারীকে আল্লাহ তায়ালা মহাপ্লাবন থেকে হেফাজত করেছিলেন।

হ’জরত হুদের (আ.) সম্প্রদায়ও একই অ’প’রাধে অ’পরা’ধী ছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রচ’ণ্ড ঘূ’র্ণিঝ’ড় দিয়ে ধ্বং’স করে দেন। হ’জরত শুয়াইবের (আ.) গোত্র ওজনে কম দিত। আল্লাহ তায়ালা এ অ’প’রাধের কারণে তাদেরও ধ্বংস করে দেন।

হ’জরত লুতের (আ.) গোত্র সমকামি ছিল। তারা যখন অ’পরা’ধের চূড়ান্তে পৌঁছে গেল, তখন আল্লাহ তায়ালা ভূ’মিকম্প ও পাথর বর্ষ’ণের মাধ্যমে তাদেরও ধ্বং’স করে দেন। এমন আরও অনেক দৃ’ষ্টান্ত রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা যাদের বিভিন্ন অ’পরা’ধের কারণে ধ্বং’স করে দিয়েছেন।

আম’রা যারা শেষ নবী হযরত মোহাম্ম’দের (সা.) উম্মত, আল্লাহ তায়ালা গোনাহের কারণে আমাদের সমূলে ধ্বং’স করবেন না ঠিক, তবে বিভিন্ন ভাইরাস-মহামা’রি বা বিপর্য’য়ের সম্মুখীন করবেন এবং সেটা করবেন আমাদের অবাধ্যতার কারণেই। যেন আম’রা তওবা করে সৎপথে ফিরে আসি।

এই মহা’মা’রি কারও জন্য হয় শা’স্তি, আর কারও জন্য পরীক্ষা। এটা যার জন্য শা’স্তি, তাকে আল্লাহ তায়ালা আশা করা যায় ক্ষমা করতে চান এবং আ’ক্রা’ন্ত ব্যক্তির উচিত আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি বেশি তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যার জন্য ম’হামা’রীটা পরীক্ষা, তার ম’র্যাদাকে আল্লাহ তায়ালা আরও বুলন্দ করতে চান। এই জন্য তার উচিত ধৈ’র্যধা’রণ করা। নিরা’শ না হওয়া।

এই মুহূর্তে আমাদের করণীয় কী’?
বিপদ-আপদে বিচলিত না হয়ে এটাকে বরং আল্লাহ তায়ালার রহমত মনে করা। মনে করা এই ভাইরা’স আমা’র নিজের গো’নাহের কারণে এসেছে। তাই অবনত মস্তকে আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইতে থাকা। আল্লাহ না করুন, আমাদের কেউ এই ভাইরা’সে আ’ক্রা’ন্ত হয়ে গেলে, তার জন্য উচিত হবে হা-হু’তাশ না করে ধৈ’র্যধা’রণ করা। আল্লাহ তায়ালাকে বেশি বেশি স্ম’রণ করা। জি’কির করা এবং গুনাহ একেবারেই বর্জন করা।

সম্মিলিতভাবে আম’রা আরেকটা কাজ করতে পারি, সেটা হল, আমাদের দেশে যেখানে যেখানে প্রকাশ্য গো’নাহ হয়ে থাকে, সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। ম’সজিদে ম’সজিদে সম্মিলিত ও একাকি তওবার ব্যবস্থা করতে পারি।

দান-সদকা বাড়িয়ে দেই। পরিবারের সবাইকে গুনাহ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করি। যারা নামাজ পড়ি না, তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করে দেই। বিপদ ও মু’সিবত যত ছোটই হোক, বা যত বড়ই হোক, সব সময় উল্লেখিত দোয়া পড়া। মনে রাখতে হবে যদি শরীরে একটি কাঁ’টাও বিধে তাহলেও এ দোয়া পড়া-

اِنَّالِلَّهِ وَ اِنَّا اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ – اَللّهُمَّ اَجِرْنِىْ فِىْ مُصِيْبَتِىْ وَاخْلُفْ لِىْ خَيْرًا مِّنْهَا –

উচ্চারণ : ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন; আল্লাহুম্মা আযিরনি ফি মু’সিবাতি ওয়াখলুফলি খাইরাম মিনহা। (মু’সলিম)

আর যখনই সুযোগ হবে তখনই দু’রাকাত করে সালাতুত তওবা পড়তে পারি। এর ফলে আশা করা যায়, আল্লাহ তায়ালা করোনা ভাইরা’স থেকে আমাদের হেফাজত করবেন।

লেখক: মুহাম্ম’দ বিন ওয়াহিদ, তরুণ আলেম ও সাহিত্যকর্মী, muhammadbinwahid96@gmail.com